thought

What will you do in the event of a threat, false case, or allegation?

কেউ মিথ্যা মামলার হুমকি দিলে করণীয়? What will you do in the event of a threat, false case, or allegation?

বর্তমানে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে নানা কারণে অনেকে হুমকির সম্মুখীন হন। এর মধ্যে অন্যতম হলো– মিথ্যা মামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো। এটি অনেক সময় হয় সম্পত্তি, পারিবারিক কলহ বা পারস্পরিক বিরোধের জেরে। মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে কাউকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করাও এক ধরনের আইনি হয়রানি। তাই একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে জানা জরুরি— মিথ্যা মামলার হুমকি পেলে কী করণীয় এবং আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে কিভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়?


১. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হুমকি:
– যদি দাম্পত্য জীবনে মিথ্যা মামলার হুমকি দেওয়া হয় (যেমন: নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে )। তবে আত্মরক্ষার্থে আইনগত পদক্ষেপ নিন।
করণীয়:
– লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করুন।
– সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব না হলে তালাক/ডিভোর্স প্রসিডিং শুরু করুন এবং দেনমোহর বুঝিয়ে দিন।

২. টাকা-পয়সা সংক্রান্ত হুমকি:

– কেউ যদি অর্থসংক্রান্ত মিথ্যা মামলার হুমকি দেয় (যেমন: চেক ডিসঅনার মামলা ) তাহলে
করণীয়:
– জিডি (সাধারণ ডায়েরি ) করে রাখুন নিকটস্থ থানায়।
– প্রমাণ সংগ্রহ করুন (অডিও/ভিডিও/মেসেজ ইত্যাদি )।
– খালি চেক নিয়ে হুমকি দিলে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

৩. অফিস সংক্রান্ত চাকরিচ্যুতির হুমকি:
– চাকরির ক্ষেত্রে হুমকি বা বেআইনি চাকরিচ্যুতি ঠেকাতে
করণীয়:
– লিগ্যাল নোটিশ দিন।
– প্রয়োজনে শ্রম আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।

৪. প্রতিবেশীর হুমকি:
যদি প্রতিবেশী শারীরিক ক্ষতি বা হেনস্থার হুমকি দেন।
করণীয়:
– ১০৭ ধারা অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মুচলেকা মামলা করুন ( Breach of Peace )।
– পাশাপাশি জিডি করুন থানায়।

৫. সম্পর্ক/বিয়ের প্রতিশ্রুতি ইস্যুতে হুমকি:
– যদি কেউ অতীত সম্পর্কের ভিত্তিতে হুমকি দেয় (যেমন: ধর্ষণ মামলা করবে বলে ),
করণীয়:
– জিডি করুন।
– লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
–পূর্বে তার করা কেস সম্পর্কে খুঁজ নিন।

৬. চাকরি বা কর্মস্থলে হয়রানির হুমকি:
– যেমন: নারী সহকর্মী কর্তৃক হেনস্থা/যৌন হয়রানির মিথ্যা অভিযোগের হুমকি।
করণীয়:
অফিসের HR বিভাগে লিখিত অভিযোগ ও প্রমাণ উপস্থাপন, প্রয়োজনে আইনি পরামর্শ।

৭. সাইবার ক্রাইমের হুমকি:
– ফেক আইডি থেকে ব্ল্যাকমেইল, ভিডিও/ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি।
করণীয়:
সাইবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ, থানায় জিডি করুন।

৮. চেক জালিয়াতি বা ব্যাংকিং জালিয়াতির হুমকি:

– পূর্বের কোনো তারিখ ও অংক বিহীন চেক যাহাতে শুধু স্বাক্ষর আপনার তাহা ব্যবহার করে ১৩৮ ধারায় মামলা করার হুমকি দিলে।
করণীয়:
চেক ফেরত নেওয়ার চেষ্টা, সময়মতো প্রতিক্রিয়া, লিগ্যাল নোটিশ প্রদান এবং চেক উদ্ধারের জন্য সার্চ ওয়ারেন্ট কেস করা ফৌজদারী কার্যবিধি ৯৮ ধারা অনুযায়ী।

৯. নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের অপব্যবহার:
– পারিবারিক কোন্দলে নারী বা শিশুকে সামনে রেখে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি।
করণীয়:
আত্মরক্ষামূলক জিডি, প্রয়োজন হলে ১০৭ ধারায় মামলা।

১০. ভুয়া যৌন হয়রানি/ধর্ষণ মামলার হুমকি:
– সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে নারী পক্ষ থেকে মামলা করার ভয় দেখানো বা যদি কেউ অতীত সম্পর্কের ভিত্তিতে হুমকি দেয় (যেমন: ধর্ষণ মামলা করবে বলে)
করণীয়:
– আলামত বা চ্যাট-কল রেকর্ড রেখে জিডি বা লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করুন।
– হুমকি প্রদানকারী অতীতে আর কারো নামে এরকম অভিযোগ এনেছে কিনা খুঁজ করুন।

১১. ভুয়া মাদক মামলা বা অস্ত্র মামলার হুমকি:
– প্রভাবশালী কেউ এসব ভয় দেখিয়ে কিছু আদায় করতে চাইলে।
করণীয়:
– জিডি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগাম জানানো।
– পত্রিকায় এসবের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করাতে পারেন।

১২. সমাজে মানহানি/শারীরিক ক্ষতির হুমকি:
– আপনার সম্মান ক্ষুন্ন করা বা হেনস্তা করার হুমকি।

করণীয়:
– থানায় জিডি, লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে প্রয়োজনে মানহানি মামলা (সিভিল বা ফৌজদারি) আদালতে করতে পারেন।
– হুমকি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লিখিত প্রমাণ সংগ্রহ করুন (স্ক্রিনশট, কল রেকর্ড, মেসেজ )।
– আপনি নির্দোষ হলে আইন আপনাকে রক্ষা করবে, ভয় পাবেন না।

“আসুন আইন জানি, আইন মানি, নিজের অধিকার নিয়ে বাঁচি”
লেখক: মো. হায়দার তানভীরুজ্জামান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
Source: citizens voice