Stage 3: Craving & Collapse
যখন সম্পর্ক ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়, আর আসক্ত ব্যক্তি অভ্যন্তরীণ ভাবে ভেঙে পড়ে
The Crumbling Begins (ভাঙনের শুরু):
যার প্রতি আসক্তি তৈরি হয়েছে, তাকে মনের মধ্যে এমন এক উঁচু জায়গায় বসানো রাখে যেনো পৃথিবীতে একমাত্র যোগ্য ও আদর্শ, যোগ্য, সুন্দর সকল দিকেই এক ব্যক্তিই একমাত্র ব্যক্তি। কিন্তু সেই মঞ্চটাই এক সময় একটু একটু করে ভেঙে পড়তে থাকে। একপাক্ষিক হলে ব্যক্তি হয়ত কখনোই সারা দেয় না। আর টক্সিন হলে হয়তো সেই ব্যক্তি যখন আগের মতো সাড়া দেয় না, কথা বলে না, দূরে সরে যায়, অবহেলা করে, আরো অনেকটাই বদলে যায়। তবুও আসক্ত ব্যক্তি পিছু হটতেই চায় না। অনড় হয়ে আটকে থাকে এক জায়গায়। উল্টো, আরও বেশি ভালোবাসা অনুভব করে। প্রাণপণ চেষ্টা করে, আরও বেশি সময়, মনোযোগ, ভালো ব্যবহার দিয়ে যেতে থাকে। নিজের সীমারেখা ছাড়িয়ে দেয়, শুধু যেন সম্পর্কটা না ভেঙে যায়। কিন্তু এতেও সম্পর্কটা তো ঠিক থাকে না, বরং আসক্ত ব্যক্তি অন্তর ভেঙে পড়ে, কষ্ট ও যন্ত্রণা, পাশাপাশি হতাশায় ডুবে যায় কালো আমাবস্যার অন্ধকারে। “আমি কি কখনোই যথেষ্ট ভালো ছিলাম না! অথবা "আমার কি সুযোগ ছিল না ঐ ব্যক্তির যোগ্য হয়ে গড়ে ওঠার?”
Emotional Collapse (ভেতরটা ভেঙে পড়ে):
যার প্রতি আসক্তি তৈরি হয়েছিল, সে যদি দূরে সরে যায়, অথবা সম্পর্কটা কেবল নামেমাত্র টিকে থাকে, ভালোবাসাহীন, প্রাণহীন, তাহলেই আসক্ত ব্যক্তির ভেতরে শুরু হয় এক গভীর যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা কেবল শুধু মন ভাঙা নয় বরং শরীরেও নানান রকম লক্ষণ প্রকাশ পায়।
শারীরিক লক্ষণের মধ্যে দেখা যায়, মাথা ব্যাথা তীব্র বা চিনচিনে, গলা শুকিয়ে যায়, হার্টবিট বেড়ে যায়, বুকের মধ্যে হাহাকার, মাথা ভার ভার লাগা, কারো কারো ঘুম একদম কমে যায়, কারো ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ঘুম বেড়ে যায়, ক্ষুধার ক্ষেত্রে কারো কারো ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খেতে ইচ্ছে করে এবং ব্যক্তির অনেক বেশি ওজন বেড়ে যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষুধা কমে যায়। মনে হয়, যেন ভেতর থেকে নিজের আশ্রয়টা হারিয়ে গেছে। এই যন্ত্রণাটা এক রকম নেশা ছাড়ার মতো, কষ্টদায়ক, ছটফট করা এক অনুভূতি। আসক্ত ব্যক্তি তখন: বারবার ফোন চেক করে। পুরনো ছবি আর কথোপকথনে ডুবে যায়, নিঃশব্দে কাঁদে, আর মনে মনে শুধু চায়, যদি একটা সুযোগ ফিরে আসতো! একবার যদি আমার সাথে কথা বলতো তাহলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। আসক্ত ব্যক্তির কথা যখনই মনে আসে তখন নিজেই নিজেকে প্রশ্নগুলো করতে থাকে “সবকিছু কি সত্যিই ঘটেছিল?” “নাকি আমি শুধু একটা অনুভূতির পিছনে দৌড়েই যাচ্ছিলাম?”এই ধাপে ভালোবাসা থাক বা না থাক, ভালোবাসার অভাব আর প্রত্যাখ্যানের ভয়ই চালিয়ে নিয়ে যায় আসক্ত ব্যক্তিকে।
আরো বিস্তারিত ভাবে এই স্টেপ চিন্তা করে দেখি,
১। Shattered Inside (ভেতরটা চূর্ণবিচূর্ণ): ভেতরটা এমনভাবে ভেঙে যায় যেন কিছুই আর ঠিক নেই। অনুভূতিগুলো টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে, আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়, আর নিজেকে খুব দুর্বল মনে হয়।
শরীরিক উপসর্গ: বুকের ভেতরে চাপ বা ভারী লাগে, হঠাৎ কাঁদতে ইচ্ছা করে, এক ধরনের দম আটকে আসা ভাব হয়, শরীর ঝিম ধরে যায়।
২। Heartbreak Overload (ভালোবাসার ভারে ভেঙে পড়া): এতো গভীর ভালোবাসার অনুভব, প্রত্যাশা আর আকর্ষণ জমে যায় যে, সম্পর্ক ভেঙে গেলে হৃদয় যেন সেই ভার আর সহ্য করতে পারে না।
শরীরিক উপসর্গ: হৃদকম্পন বেড়ে যায়,
বুক ব্যথা বা চেপে আসার অনুভূতি হয়, মাথা ঝিমঝিম করে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
৩। The Inner Crash (হৃদয়ের অভ্যন্তরে পতন) : মনের ভিতরে একধরনের ভাঙন ঘটে, ঠিক যেনো অদৃশ্য এক কারাগার, মুক্তি মেনে না। আর কিছু অনুভব হয় না মাঝেমধ্যে, আশাহীন এক শূন্যতায় ডুবে যাওয়া। একাকিত্ব বা বোধহীন অসাড়তা কাজ করে।
শরীরিক উপসর্গ: ক্লান্তি, কিন্তু ঘুম আসছে না।
মনযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, মাথায় কয়েক মণের কিছু একটা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন ভারী লাগে। পেটের সমস্যা গুড়গুড়, ব্যথা, বার বার টয়লেট হতে থাকা, বা খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস বদলে যায়।
৪। Losing Yourself (নিজেকে হারিয়ে ফেলা): ব্যক্তি আগে যেভাবে নিজেকে চিনতে পারতো হঠাৎ ভাবতে থাকে সেই আমি আর এই আমি একই ব্যক্তি নই। নিজস্বতা, ইচ্ছা, বাউন্ডারি সব হারিয়ে গেছে কারো ভালোবাসা ধরে রাখার অপচেষ্টায়।
শরীরিক উপসর্গ: আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে অপরিচিত লাগে, অস্থিরতা, চুপচাপ হয়ে যায় বা কেন যেনো কোন কথায় বলতে ইচ্ছে করে না, গলার কাছটা আটকে আসে, মনে হয় দলা পাকিয়ে কোন কিছু গলায় আঁটকে আছে,
নিজের প্রতি নিজেরই বিরক্তি বা অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করে।
৫। Emptiness After Attachment (আসক্তির পরের শূন্যতা): যার প্রতি এত গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে মন, সে যখন চলে যায় বা অন্য কারো সঙ্গী হয়ে যায়, তারপর যেনো মনে হয়, ভেতরে আর কিছুই নেই। সব আবেগ নিঃশেষ।
শরীরিক উপসর্গ: সবকিছু অর্থহীন লাগে,
চোখ শুকিয়ে যায়, কান্নাও আসে না, শারীরিকভাবে নিস্তেজ বা ভারসাম্যহীন অনুভতি কাজ করে, বিষণ্নতা, মন খারাপ দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকে.
ফাতেমা শাহরিন
সাইকোলজিস্ট